মোরেলগঞ্জ ও শরণখোলা : বাগেরহাট-৪ আওয়ামী লীগে নবীন প্রবিন দ্বন্দ্ব-বিবাদ বিএনপিতে অস্বস্তি

মোরেলগঞ্জ ও শরণখোলা : বাগেরহাট-৪ আওয়ামী লীগে নবীন প্রবিন দ্বন্দ্ব-বিবাদ বিএনপিতে অস্বস্তি

Brand Bazaar

মোরেলগঞ্জ ও শরণখোলা উপজেলা নিয়ে বাগেরহাট-৪ আসন। সুন্দরবন সংলগ্ন বলেশ্বর ও প্রমত্তা কচা নদীবিধৌত এই উপজেলার বেশিরভাগ মানুষ ব্যবসা-বাণিজ্যের ওপর নির্ভরশীল। একাদশ সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বেশ কয়েকজন রাজনৈতিক নেতার পদচারণায় মুখর এই আসন। জেলার অন্য তিনটি আসনের চেয়ে এই আসনের দলীয় নেতাকর্মীরা অনেকটা আগেভাগেই রাজনৈতিক মাঠ নিজেদের অনুকূলে রাখতে ব্যস্ত সময় পার করছেন।

মোরেলগঞ্জ ও শরণখোলা : বাগেরহাট-৪ আওয়ামী লীগে নবীন প্রবিন দ্বন্দ্ব-বিবাদ বিএনপিতে অস্বস্তি

আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতাদের অন্যতম শেখ আবদুল আজীজ ১৯৭৩ সালে এই আসন থেকে নির্বাচিত হয়ে প্রথমবারের মতো বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মন্ত্রিসভায় তথ্য, টেলিকমিউনিকেশন, যোগাযোগ ও কৃষি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করেন। পরবর্তীকালে তারই উত্তরসূরি হিসেবে ১৯৯৬ সালে সমাজকল্যাণ, মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ে প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন ডা. মোজাম্মেল হোসেন। তিনি এখন সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি। তবে এবার দলীয় মনোনয়ন প্রাপ্তিতে নিজ দলের নেতাদের শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতার মুখে পড়তে পারেন তিনি।

পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বাগেরহাট-৪ আসনে আওয়ামী লীগের সঙ্গে ভোটযুদ্ধে বিএনপির চেয়ে জামায়াতে ইসলামী বরাবরই শক্ত অবস্থানে ছিল। বর্তমানে জামায়াতের সাংগঠনিক কার্যক্রম এখানে খুব একটা জোরালো না হলেও আগামী নির্বাচনে তাদের প্রভাব দৃশ্যমান হবে বলে স্থানীয় রাজনৈতিক বিশ্নেষকরা মনে করছেন। ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারির বিতর্কিত নির্বাচন ছাড়া কোনো নির্বাচনেই এখানে বিএনপি প্রার্থী জয় পাননি। তাই জামায়াত এ আসনে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের মনোনয়ন চাইবে বলে জানা গেছে। ফলে স্বভাবতই অস্বস্তি তৈরি হয়েছে বিএনপি নেতাকর্মীদের মধ্যে।

Brand Bazaar

এ আসনে আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য প্রার্থীদের মধ্যে রয়েছেন বর্তমান এমপি ডা. মোজাম্মেল হোসেন, দলের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সদস্য অ্যাডভোকেট আমিরুল আলম মিলন, ছাত্রলীগের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি এইচএম বদিউজ্জামান সোহাগ, সাবেক অতিরিক্ত আইজিপি আবদুর রহিম খান ও দলের সাবেক কেন্দ্রীয় সহ-সম্পাদক জামিল হোসাইন।

২০০৮ সালের নির্বাচনে জয়লাভের পর থেকে মোরেলগঞ্জ ও শরণখোলা উপজেলা আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে ডা. মোজাম্মেল হোসেনের দূরত্ব বাড়ে। এ কথা স্বীকারও করেছেন ডা. মোজাম্মেল হোসেন। তবে তিনি বলেন, এলাকায় যে উন্নয়ন করেছেন আগের আট এমপিও তা করেননি। দলীয় প্রধান শেখ হাসিনার তার প্রতি আস্থা রয়েছে। আগামীতে তিনিই মনোনয়ন পাবেন।

মোরেলগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট আমিরুল আলম মিলন বলেন, দীর্ঘ ১২ বছর সভাপতি ও ১৫ বছর সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করায় স্থানীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে তার সুসম্পর্ক রয়েছে। রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড বিবেচনায় এনেই দলের সভাপতি শেখ হাসিনা তাকে কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সদস্য করেছেন। এখন তিনি এলাকার মানুষের জন্য কাজ করতে চাইছেন বলেই আগামী নির্বাচনে দলের মনোনয়ন প্রত্যাশা করছেন।

 

জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য এইচএম বদিউজ্জামান সোহাগ বলেন, তিনি ছাত্রজীবন থেকে দলের জন্য কাজ করছেন। সব সময়ই সাধারণ মানুষের পাশে থেকেছেন। এলাকার উন্নয়নে কাজ করেছেন। তরুণ প্রজন্মের জন্য তার নিজস্ব চিন্তাভাবনা রয়েছে। তিনি আগামী নির্বাচনে দলের মনোনয়ন প্রত্যাশা করছেন।

আবদুর রহিম খান বলেন, আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা মনোনয়ন দিলে তিনি নির্বাচনে লড়বেন। আর মনোনয়ন না পেলে তিনি দলীয় প্রার্থীর পক্ষে কাজ করবেন। একই বক্তব্য জামিল হোসাইনেরও।

বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশীদের তালিকায় রয়েছেন- দলের জেলা সহসভাপতি কাজী খায়রুজ্জামান শিপন, জেলা উপদেষ্টা কাজী মনিরুজ্জামান মনির ও মনিরুল হক, কেন্দ্রীয় শিক্ষাবিষয়ক সম্পাদক ড. এবিএম ওবায়দুল ইসলাম।

কাজী খায়রুজ্জামান শিপন বলেন, ওয়ান-ইলেভেনের পর দুঃসময়ে মোরেলগঞ্জ ও শরণখোলায় তৃণমূল পর্যায়ে তিনিই ছিলেন দলের একমাত্র নেতা। ওই সময় তিনিই বিএনপির সব আন্দোলন-সংগ্রামে নেতৃত্ব দিয়েছেন। সুখে-দুঃখে সকল পর্যায়ের স্থানীয় নেতাকর্মীদের পাশে থেকেছেন। এ সব কারণে তিনি আগামী নির্বাচনে দলের মনোনয়ন চাইবেন।

কাজী মনিরুজ্জামান মনির বলেন, ১৯৯১ সাল থেকে মাঠ পর্যায়ে কাজ করতে গিয়ে তার বিরুদ্ধে ১৪টি মামলা হয়েছিল। মামলার কারণে তিনি এলাকায় যেতে পারছেন না। তবে নেতাকর্মীদের অর্থনৈতিকভাবে সহযোগিতা করছেন।

মনিরুল হক বলেন, রাজনৈতিক পারিবারে তার জন্ম। দীর্ঘদিন ধরে বিএনপির একজন সক্রিয় কর্মী হিসেবে কাজ করছেন। তিনি অনেক মামলার আসামি ও গ্রেফতার-নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। এখন তিনি অবহেলিত জনপদ মোরেলগঞ্জ ও শরণখোলার মানুষের কল্যাণে কাজ করতে আগামী নির্বাচনে দলের মনোনয়ন চাইবেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. এবিএম ওবায়দুল ইসলাম বলেন, ১৯৯১ সাল থেকে এ অঞ্চলে বিএনপির কেউ এমপি হতে পারেননি। এ অবস্থায় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া তাকে কেন্দ্রীয় কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত করেছেন। এ কারণে তার কাছে এলাকাবাসীর অনেক প্রত্যাশা রয়েছে।

রাজনৈতিকভাবে নিবন্ধন বাতিল হওয়া জামায়াতে ইসলামীর মাঠ পর্যায় কোনো তৎপরতা না থাকলেও নির্বাচনী প্রস্তুতি রয়েছে দলের নেতাদের। আগামী নির্বাচনে জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থী হিসেবে রয়েছেন অধ্যাপক শহিদুল ইসলাম। বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের প্রধান শরিক হওয়ায় জামায়াত এ আসনে জোটের মনোনয়ন চাইবে বলে জানা গেছে।

জাতীয় পার্টির (জাপা) প্রার্থীর তালিকায় আছেন সোমনাথ দে। জাপা এককভাবে নির্বাচন করলে তিনি হবেন এই আসনের প্রার্থী। পার্টির এই কেন্দ্রীয় নেতা বলেন, তিনি সব সময়ই মোরেলগঞ্জ ও শরণখোলার মানুষের পাশে থেকেছেন। এলাকার মানুষের নানা সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করেছেন। তার প্রত্যাশা, এলাকার মানুষ তাকে নির্বাচিত করে তাদের সেবা করার সুযোগ করে দেবেন।

আপনি আরও পড়তে পারেন

Leave a Comment